১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা মিলবে ৩১বছরে

 

https://i1.wp.com/sharebiz.net/wp-content/uploads/2017/02/1_259106.jpg?resize=640%2C402

ইসমাইল আলী: অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শুরু হয়েছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। ২০১৮ সালের মধ্যে এর নির্মাণ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতু নির্মাণ শেষ হলে উম্মুক্ত হবে দক্ষিণ দুয়ার। এতে উপকৃত হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীরা। ওই অঞ্চলে সম্প্রসারণ হবে বিনিয়োগ ও শিল্পোৎপাদন। কমবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। এতে সব মিলিয়ে ৩১ বছরে পদ্মা সেতু থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা (ইকোনমিক বেনিফিট) মিলবে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস: পদ্মা ব্রিজ প্রজেক্ট’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার, স্মার্ট সল্যুশনস ফর বাংলাদেশ ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালনা করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার।

২০১০ সালে এ ধরনের আরেকটি গবেষণা পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক সেলিম রায়হান ও বজলুল হক খন্দকার পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, ৩১ বছরে সেতুটি থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা অর্থনৈতিক বেনিফিট পাওয়া যাবে। তবে সে সময় সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এতে সেতুটির ইকোনমিক বেনিফিট নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। এমনকি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি থেকে আশানুরূপ বেনিফিট মিলবে না বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় পদ্মা সেতুর কস্ট-বেনিফিট বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ড. আশিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় এরই মধ্যে দুই ধাপে বেড়েছে। মূল সেতু, নদীশাসনসহ প্রতিটি অংশেরই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অনেকেই সেতুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বেনিফিট নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। এজন্য কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারসহ তিন সংস্থার উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। তবে এ গবেষণায় আশাবাদী হওয়ার মতো তথ্য মিলেছে। ব্যয় বাড়লেও সেতুটি নির্মাণ এখনও লাভজনক।

ব্যয় খাতের মূল্যায়নে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৬১ কোটি ও ২০১৫ সালে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। একইভাবে বেড়েছে নদীশাসনের ব্যয়। ২০০৭ সালে এ খাতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি ও ২০১৫ সালে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এছাড়া সংযোগ সড়ক নির্মাণব্যয় ৩৬০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯০৮ কোটি, জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ৩০৬ কোটি থেকে ১ হাজার ২৯৮ কোটি এবং পুনর্বাসন ব্যয় ৫২৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে ২০০৭ সালে পুরো প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ও ২০১৫ সালে ২৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা।

এদিকে বেনিফিট মূল্যায়নে গবেষণায় ব্যবহার করা হয় সাকসেসিভ অ্যাপ্রোক্সিমেশন মডেল (এসএএম)। এতে দেখা যায়, সেতুটি ব্যবহারের ফলে ২৩ শতাংশ সময় সাশ্রয় হবে। এতে গাড়ি পরিচালনা ব্যয়ও কমবে। সব মিলিয়ে ৩১ বছরে সেতু ব্যবহারকারীদের বেনিফিট দাঁড়াবে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সেতুটি নির্মাণের ফলে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন উৎসাহিত হবে। এতে অর্থনীতির সার্বিক বেনিফিট হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সেতুটির প্রত্যক্ষ বেনিফিট দাঁড়াবে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে পরোক্ষ প্রভাব বিবেচনা করলে তা আরও বেড়ে যাবে।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সেতুতে যান চলাচল কম হলে এর ইকোনমিক বেনিফিট কিছুটা কমবে। সেক্ষেত্রে ৩১ বছরে বেনিফিট দাঁড়াবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সেতুটি ব্যবহারকারীদের বেনিফিট থাকবে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর অর্থনীতির সার্বিক বেনিফিট হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।

ড. আশিকুর রহমান বলেন, দেশের দুই অংশ এখনও নদী দিয়ে বিভক্ত। পদ্মা নদীর এপারে প্রচুর শিল্প-কারখানা আছে। অথচ বরিশাল, খুলনায় তেমন কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি। ফলে দুই অঞ্চলের মধ্যে মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ এ ধরনের বৈষম্য ঘোচাবে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা থেকে কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বেনিফিট পাওয়া সম্ভব। তাই সেতুটি নির্মাণ নিয়ে কোনো ধরনের সংশয়ের অবকাশ নেই।

প্রসঙ্গত, কস্ট-বেনিফিট বিশ্লেষণে গাড়ি চলাচলের সম্ভাব্য সংখ্যা ও টোলের হার ধরা হয় পদ্মা সেতুর বিস্তারিত নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্য। আর যানবাহন পরিচালনা ব্যয় পরিমাপে ২০০৪-০৫ সালে প্রণীত রোড ইউজার কস্ট রিপোর্টের তথ্যকে বর্তমান মূল্যে রূপান্তর করা হয়।

Dr. Ashikur Rahman

Dr. Ashikur Rahman

Dr Ashikur Rahman is a Principal Economist at the Policy Research Institute of Bangladesh (PRI) and Member Secretary of Bangladesh Economists’ Forum (BEF) – leading association of eminent professional and academic economists from Bangladesh. He has worked as a policy economist in Bangladesh for more than a decade and has ...

Dr. Bazlul Haque Khondker

Dr. Bazlul Haque Khondker

Dr. Bazlul Haque Khondker holds a PhD from the University of Warwick and is currently teaching at Dhaka University as a Professor of Economics. His areas of expertise include: (i) analysis of poverty and income distribution impacts of trade and tax policy reforms using static as well as dynamic Computable ...

gog