সাক্ষাৎকার: শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঘিরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চিন্তা ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি

 

বজলুল হক খন্দকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক। ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অরউইক থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। দারিদ্র্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ডাটা অ্যানালাইসিস ও ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, নীতি প্রণয়ন, আঞ্চলিক বৈষম্য, রাজস্বের প্রভাব, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে তার গবেষণা বিস্তৃত। তিনি বিভিন্ন দেশের সোশ্যাল অ্যাকাউন্টিং ম্যাট্রিক্স প্রণয়ন, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার, আয় বণ্টন সহায়ক নীতি প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, সর্বজনীন পেনশন স্কিমসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

বণিক বার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আপনি সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে বলেছিলেন। সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।  বিষয়ে এখন আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

দেরিতে হলেও সরকার যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম শুরু করতে যাচ্ছে তার জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতে হবে। কারণ আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং তাদের মধ্যে বড় একটা জনগোষ্ঠী আয়ের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। একটা বয়সের পর মানুষ আর কাজ করতে পারে না। ফলে তাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে সর্বজনীন পেনশন চালু করা খুব দরকার। এখন দেখার বিষয়, সরকার এটাকে কতটা বাস্তবায়ন করতে পারে এবং কীভাবে এটি পরিচালিত হয়। এখানে কতগুলো বিষয় রয়েছে, যেদিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। সরকার এখানে কোনো ভর্তুকি দেবে না। পেনশন তহবিলে যে অর্থ জমা হবে সেই অর্থ দিয়েই এটি পরিচালনা করতে হবে। আমরা এখনো জানি না যে কী পরিমাণ মানুষ এখানে অংশগ্রহণ করবে এবং অংশগ্রহণকারীরা যে টাকাটা দিচ্ছে তা কীভাবে ম্যানেজ করা হবে। অ্যাকচুয়ারি ঠিক থাকতে হবে। প্রতি বছর কতজন অবসরে যাবেন তার প্রাক্কলন যদি সঠিক না হয় এবং ফান্ড ম্যানেজমেন্ট যদি যথাযথ না হয়, তাহলে এটি বোঝায় পরিণত হবে। তাই পেনশন ফান্ড ম্যানেজমেন্টের জন্য দক্ষ একটি দল থাকতে হবে।

অন্যান্য দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?

প্রতিটি দেশেই সাধারণত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থাকে। সেখানে সরকারের প্রতিনিধিও থাকতে পারে। মূল বিষয় হলো, একটি স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থাকবে যারা নিজেদের অর্থে চলবে ও তহবিল ব্যবস্থাপনা করবে। পাশাপাশি তারা প্রতি বছর প্রতিবেদন জমা দেবে, অডিট করাবে ও আয়-ব্যয়ের হিসাব দেবে ইত্যাদি— কার্যক্রমগুলো এভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত। অন্যান্য দেশে এভাবেই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ কাজগুলোর পাশাপাশি তারা পেনশন ফান্ডে প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে। এর মাধ্যমে ফান্ডের আয় বাড়ে। বিনিয়োগ তথ্যগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের সমস্যা হলো, আমাদের অনানুষ্ঠানিক খাতের পরিধি বড়। অন্যান্য দেশে আনুষ্ঠানিক খাতের ব্যাপ্তি বেশি হওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবাই পেনশনের আওতাভুক্ত হয়। তাদের ব্যবস্থাটাই সেভাবে করা, যে কেউ চাকরি শুরু করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পেনশন কেটে নেয়া হয়। তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পেনশন প্রক্রিয়ার সংযোগ ঘটিয়েছে। আমাদের বিষয়গুলো অনেকটা উল্টো। আমাদের অনানুষ্ঠানিক খাতের পরিধি ৮০ শতাংশ। এ মানুষগুলোকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তাই সরকার ২০ শতাংশের জন্য পেনশন চালু করবে নাকি সবার জন্য ব্যবস্থা নেবে, এটা নিয়ে ভাবতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য পেনশন চালু করতে হলে অতিরিক্ত জোর দেয়া প্রয়োজন। এ জায়গায় সরকারকে অনেক কাজ করতে হবে, যা নতুন একটা চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ শুধু বাংলাদেশের একার নয়, এ ধরনের চ্যালেঞ্জ অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য। ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতেও এ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

অন্য দেশগুলো কীভাবে তাদের অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় এনেছে?

ভিয়েতনাম তাদের অনানুষ্ঠানিক খাতের সবাইকে এখনো পেনশন স্কিমে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। তাই তাদের পেনশন তহবিল এখনো ততটা শক্তিশালী হয়নি। অনানুষ্ঠানিক খাতকে কিছু সুবিধা দিয়ে কিছু সময় সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে পেনশন স্কিম চালু করা হয়, এরপর সরকার ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাবে—এটা একটি পদ্ধতি। এ ধরনের কিছু চেষ্টা বিভিন্ন দেশে হয়েছে। ভারতের পেনশন মডেলটি সম্ভবত বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং সে আলোকে এটি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এখানে কিছু বিষয় আছে। যাদের আমরা পেনশনের অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছি তারা নিয়মিত কিস্তি দিতে পারবে কিনা, তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। আবার যারা অর্থ জমা দেবে তাদের আস্থা অর্জনেরও প্রয়োজন রয়েছে। ডেসটিনি, যুবকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষের প্রতারিত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। তাছাড়া অনানুষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অর্থও আসে অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে। এ মানুষগুলো আনুষ্ঠানিক ব্যাংক ও বীমার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট নয়। তাদের আস্থা অর্জন বড় বিষয়। পেনশন খাতভিত্তিক নয়, সবার জন্য একই ব্যবস্থা। সেখানে সবার একটা হিসাব থাকবে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দেয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত পাবে, এটিই মূল বিষয়। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত. ব্যক্তির প্রতি মাসে অর্থ জমা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে কিনা। দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়াটির প্রতি মানুষের আস্থা আছে কিনা। এ দুই বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের পেনশন ফান্ড ভালো কাজ করবে।

নারীদের কাজের একটি বড় অংশের এখনো স্বীকৃতি মেলেনি। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আরো কীভাবে বাড়ানো যায়?

সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টসের (এসএনএ) হিসাবে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ কম। গৃহস্থালি, আনপেইড কেয়ার ওয়ার্কসহ আরো কিছু কাজ আছে, যা নারীরাই করে থাকেন, জিডিপিতে তা গণনা করা হয় না। এগুলো হিসাব করলে দেখা যাবে যে, জিডিপিতে নারীদের একটা বড় অংশগ্রহণ আছে, যা জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ। আমরা কখনো নারীর এ অবদান চিহ্নিত করিনি। এটা করা উচিত। জিডিপিতে না করলেও শ্যাডো জিডিপি হিসেবে এটি আসতে পারে। এখন যেমন জিডিপিতে কোন কোন খাতের কী পরিমাণ অংশগ্রহণ তা দেখানো হয়, তেমনি গৃহস্থালি ও আনপেইড কেয়ার ওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টিও তুলে ধরা যায়। এভাবে দুটি মিলিয়ে জিডিপিতে নারীর অবদানের বিষয়টি সামনে আনা সম্ভব। প্রতি বছর আমরা যদি জিডিপির সঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের তথ্যগুলো প্রকাশ করি তাহলে নারীর অবদানের বিষয়টির মূল্যায়ন হবে। বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ কাজটি করতে পারে। সামাজিক ও পারিবারিক মনস্তত্ত্বের কারণে অনেক সময় একজন নারী সংসারের বাড়তি কাজের দায়িত্ব নেন। অনেক সময় তার পুরুষ সঙ্গীটিও এগিয়ে আসে না। কেয়ার সার্ভিসের পেছনে প্রতিদিন একজন নারী ৪-৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। এক্ষেত্রে বিভাগের পাশাপাশি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে শিশুদের জন্য প্রি-স্কুলের ব্যবস্থা করে নারীর ওপর কাজের বোঝাটা কমানো যায়। তাছাড়া শিশুরা এ ধরনের স্কুলগুলোয় যেভাবে বেড়ে উঠবে তাতে তার মানসিক ও শারীরিক বিকাশটাও ভালো হবে। বয়স্কদের যত্নের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। একজন বয়স্ক লোক কী সারা দিন বাড়িতে বসে থাকবে? কিংবা তাদের কী কাজ করতে হবে? তাদেরকে শিশুদের কেয়ার সার্ভিসে নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে তাদের সময়টাও ভালো কাটবে। আমরা যদি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে এ ধরনের কেয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে নারীদের একটা বড় অংশ আনুষ্ঠানিক শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। বিদ্যমান যে কেয়ার সার্ভিসগুলো রয়েছে, তা অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে। এখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান যে অবকাঠামো রয়েছে, যেমন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা স্কুলগুলোর পাশের জমিতে আরো স্থাপনা তৈরি করে প্রি-স্কুল, আর্লি লার্নিং সেন্টার এবং বয়স্কদের জন্য বিশেষ কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে। এ কেন্দ্রগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে নারীরা। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। সরকার কাজগুলো শুরু করতে পারে, এরপর বেসরকারি খাত এগিয়ে আসবে। দরিদ্র গোষ্ঠীর জন্য সরকার ভর্তুকি দেবে। কিন্তু যাদের খানিকটা সামর্থ্য আছে তারা ন্যূনতম অর্থ দেবে। যেমন একটা শিশু ও পরিবারের বয়স্ক সদস্যের জন্য মাসে ৫০০ টাকা সরকারকে দিতে হবে। বিনিময়ে তারা উন্নতমানের সেবা পাবে। অনেকেই এতে আগ্রহী হবে এবং তাদের এটি দেয়ার সামর্থ্যও রয়েছে। যারা একদম পারবে না, তাদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন খাতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, তাই অল্প কিছু ভর্তুকি এখানে দেয়া যেতেই পারে। এটা ভর্তুকি ও ফিভিত্তিক মডেল হবে। ধনিক শ্রেণীর কাছ থেকে যদি আমরা আর একটু বেশি ফি বা চার্জ নিতে পারি তাহলে সরকারের থেকে ভর্তুকি কম নিতে হবে। এ মডেলটা দাঁড়িয়ে গেলে একটা পর্যায়ে সরকারকে আর কোনো ব্যয় করতে হবে না। যেমন কানাডার সরকার শিশুদের জন্য আর্লি লার্নিং সেন্টারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তারা কিছু হিসাব করেছে। কানাডার মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী কাজ করে কুইবেক অঞ্চলে। কারণ এখানে মানসম্পন্ন সর্বজনীন আর্লি লার্নিং চাইল্ড কেয়ার সেন্টার রয়েছে। তারা দেখেছে যে, সেন্টারটি থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই এর সব খরচ চালানো যায়। অতিরিক্ত কোনো খরচ লাগে না। তাই আমাদের হয়তো প্রথম পাঁচ বছর ভর্তুকি দিতে হবে, এরপর আর লাগবে না। এ ধরনের মডেল বাংলাদেশও চিন্তা করতে পারে। শুরুতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে করতে পারে। এরপর এর ভিত্তিতে প্রকল্পটিকে একটি পর্যায়ে নেয়া যেতে পারে।

দেশে বর্তমানে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি হলেও ২০৩৫ সাল নাগাদ বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি হবে বলে গবেষকরা বলছেন। তাদের জন্য এখন থেকে কী ধরনের পরিকল্পনা করা উচিত?

সরকার তরুণদের জন্য যুব বাজেট করছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমবাজারের চাহিদা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে তফাৎ বিদ্যমান। বাংলাদেশ এখনো বাজার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। সবাইকে উচ্চশিক্ষিত করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের এত বেশি উচ্চশিক্ষিত লোকের দরকার নেই। বাংলাদেশের ম্যানেজার, মিড ম্যানেজার, সুপারভাইজার এ ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন লোক প্রয়োজন। আমাদের অনেক স্নাতক, স্নাতকোত্তর পাস করা তরুণ থাকা সত্ত্বেও ভারত কিংবা শ্রীলংকা থেকে লোক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এটি শিল্প ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অসামঞ্জস্যতার উদাহরণ। এ ধরনের শূন্যতা কাটাতে দ্বাদশ শ্রেণীর পর অন্য ধরনের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকা দরকার, আর তা হচ্ছে ‘ট্রেড এডুকেশন’। সেখানে দুই বছর পড়ার পর শিক্ষার্থীরা সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবে। এখানে ব্যবস্থাপকরা কাজ করতে করতে শেখে, আগে থেকে তাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিকের কাজগুলোয় উপার্জন অনেক। দেশের মানুষের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিন্তু এখনো এ জায়গাগুলোতে শূন্যতা রয়ে গেছে। আগামী ১০ বছরে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরিসর যদি আরো বৃদ্ধি পায়, সে চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরি করা জরুরি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন খাতগুলোর ব্যাপ্তি বাড়বে তা এখন থেকে বিবেচনায় নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী লোক তৈরি করতে হবে।

দেশের পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটগুলোয় কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ জনবল তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু এগুলোয় সুফল মিলছে না কেন?

উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সংযোগ ঘটাতে হবে। যেমন প্রতি বছর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ জন করে শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিতে পারে। প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে শুধু বিদেশীদের চাকরি দেয়ায়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটকে অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করতে পারে। এ বিনিয়োগ তাদের উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক হবে। এভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও দক্ষ লোক তৈরির জন্য তদারকি বাড়াবে। প্রয়োজনে কারিকুলাম পরিবর্তনের সুপারিশ করবে। এখন কেউ-ই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কথা শুনতে পারছে না। এভাবে বেকার সমস্যা সমাধানেরও সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলছি। কিন্তু দেশের ২৯ শতাংশ তরুণ বেকার জনগোষ্ঠী দিয়ে এটি অর্জন করা সম্ভব হবে না।

বেকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবেশ কতটা সহায়ক?

সবাই তো উদ্যোক্তা হবে না, হয়তো ১০ শতাংশ আগ্রহী হবে। বাকি ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তাদের সঙ্গেই কাজ করবে। তাছাড়া বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো যদি আরো উৎপাদনশীল না হয় তাহলে এত লোককে কাজ দেয়া সম্ভব হবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্পের মেরুদণ্ড হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তারা কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের জোগান দেয়। এ জায়গাগুলোয় বাংলাদেশকে অনেক কাজ করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর ওপর গবেষণা করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে প্লাস্টিক শিল্প, ওষুধ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্প, আসবাব শিল্প ও পাট শিল্প বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতগুলো ঘিরে কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

জাপানকানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য ওল্ড হোম রয়েছে।  ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদেরও কি ভাবার সময় আসেনি?

যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করতে পারে তাহলে তা স্বাস্থ্যকর ও সুখকর। কিন্তু ভবিষ্যতে এটা কতটা সম্ভব হবে তাও বিবেচনা করতে হবে। ওল্ড হোম ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আর্থিক বিষয়ও রয়েছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের কথা বিবেচনা করে তিনভাবে ওল্ড হোম করা যেতে পারে। বাইরের দেশগুলোয় যেমন লাক্সারি অ্যাকোমোডেশন, অ্যাফোরডেবল অ্যাকোমেডেশন ও নন-অ্যাফোরডেবল অ্যাকোমোডেশন রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে পলিসি গ্রহণ করতে হবে।

এটা কি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় করতে হবে

সাধারণত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনেই হওয়া উচিত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এটা করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যেমনটা বলা হয় যে, ৩ শতাংশের মতো বরাদ্দ বেড়েছে। তবে এতে সরকারি পেনশন ছাড়াও সঞ্চয়পত্রের সুদ অন্তর্ভুক্ত করে সংখ্যাটা বলা হয়। এ বিষয়গুলো বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ ১ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি নয়। তাছাড়া সচ্ছল পরিবারগুলোই সঞ্চয়পত্র কিনছে বেশি। নানাভাবে বরাদ্দ বেশি দেখানো যায়। কিন্তু আমাদের সার্বিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা কোন শ্রেণীকে সমর্থন করছি—এটা স্পষ্ট করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারি বরাদ্দ এখনো ৩ শতাংশের নিচে। দ্বিতীয় হচ্ছে, এখনো অনেক লোককে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। আবার যাদের প্রয়োজন নেই এমন অনেকে তালিকায় রয়েছে। আমরা ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি) কাজে লাগাতে পারিনি। মহামারীর সময় এবং এখনো এক কোটি মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে কিন্তু কীসের ভিত্তিতে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। এ জায়গাগুলোয় আমাদের বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের জন্য পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) থেকে আমরা একটি গবেষণা করেছিলাম। ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজের তথ্যগুলো এখন আর হালনাগাদ আছে কিনা তা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নেই। আবার নতুন করে এনএইচডি করার কথা বলা হচ্ছে। এটিরও যদি একই পরিণতি হয় তাহলে কিন্তু কোনো লাভ নেই। আমাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা শতভাগ মানুষের জন্য শুমারি করব নাকি নিচের দিকের ৫০ শতাংশের জন্য করব। উপরের দিকের ৫০ শতাংশ এমনিই তথ্য দেয় না। তাই তাদের বাদ দিয়েই সার্ভে করা উচিত। এখন অটোমেশন হয়ে গেছে। তাই অনলাইনে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিকে আমরা জনপ্রিয় করতে পারি। অনলাইনে অনেক অ্যাপস রয়েছে, যার মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করতে এবং তা হালনাগাদও করতে পারি। এ জায়গাগুলোয় এখনো অনেক কাজ করার আছে। এছাড়া সরকার একটা পাইলট প্রকল্প করে দেখতে পারে—সরকার যে ১৫০টা উপজেলায় জিওগ্রাফিক্যাল টার্গেটিং করছে তার তথ্য এবং কমিউনিটিগুলোকে ব্যবহার করে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে অন্তর্ভুক্তি ও বাদ পড়ার বিষয়গুলোয় উন্নত করা যায় কিনা। ফিলিপাইন তাদের ন্যাশনাল হাউজিং ডাটাবেজ (সোশ্যাল রেজিস্ট্রি), জিওগ্রাফিক্যাল টার্গেটিং এবং কমিউনিটিকে ব্যবহার করে বলেছে যে, তাদের বাদ পড়ার বিষয়গুলো অনেক কমে গেছে। বাদ পড়ার বিষয়টি এড়ানো কঠিন, তবে হার কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা যখন নিচের দিকের ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করব, তখন তত্ত্বগতভাবেই ‘এক্সক্লুশন এরর’ হবে ৬০ শতাংশ। এটাকে কমাতে হলে সোশ্যাল রেজিস্ট্রি, জিওগ্রাফিক্যাল টার্গেটিং ও কমিউনিটিভিত্তিক টার্গেটিং করে অগ্রসর হতে হবে। এ ধরনের কিছু পাইলট কার্যক্রম সরকার করতে পারে, যার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব এ ধরনের পদ্ধতিগুলো বাংলাদেশে কাজ করে কিনা। পরবর্তী সময়ে এর ভিত্তিতে আমরা আরো অগ্রসর হতে পারব।

করোনাকালে তথ্যের অভাবে মহামারীতে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর কাছে সরকার সঠিকভাবে সাহায্য পাঠাতে পারেনি। এত বছর পর এসেও কেন তথ্যগত এত সংকট?

করোনার পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের ডিজিটাল তথ্য ছিল না। এখন বিষয়টি হলো এ পরিস্থিতি থেকে আমরা শিখতে পেরেছি কিনা। এখন আমাদের দ্রুত এনএইচডি প্রকাশ করে তার বাস্তবায়ন করা উচিত। পাশাপাশি সোশ্যাল রেজিস্ট্রি ও বেনিফিট রেজিস্ট্রি করে ফেলা উচিত। আমি বলছি না, এগুলো করা হলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। তবে আমরা কাজগুলো সম্পাদনের জন্য একটি ধাপ অগ্রসর হতে পারব। এনএইচডি মূল্যায়ন করলে আমরা বলতে পারব যে, নিচের দিকে এ ৩০ শতাংশ লোককে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আনা উচিত। বছরের শুরুতে একটা তালিকা প্রকাশ হবে। তথ্যগুলো উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চলে যাবে। এ তালিকা যে নিখুঁত হবে তা নয়। এরপর উপজেলা ও ইউনিয়নে গিয়ে সেখানকার কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে। কমিউনিটিগুলো থেকে একটা করে তালিকা নিতে হবে। এরপর এনএইচডি ও কমিউনিটিগুলো থেকে প্রাপ্ত তালিকা যাচাই করতে হবে। দুটি তালিকার মধ্যে হয়তো ৮০ শতাংশই মিল থাকবে। বাকি যে ২০ শতাংশ মিলবে না, সেটি পুনরায় যাচাই করতে হবে। কমিউনিটির মধ্যে থেকে যে দল গঠন করা হবে সেখানে শিক্ষক, স্থানীয় নেতা ও একজন দিনমজুর থাকবেন। তাদের পুনরায় যাচাই করতে বলা হবে। তারা যাচাই করে যদি দেখেন যে, ২০ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জনকে তালিকাভুক্ত করা যায়। তাহলে আমরা বাকি ১০ জনকে বাদ দেব। আমরা যদি কয়েক বছর এভাবে অগ্রসর হতে পারি তাহলে একটি পদ্ধতি দাঁড়িয়ে যাবে। কমিউনিটিগুলোর ক্ষমতায়ন হবে এবং তারা তাদের ভূমিকা উপলব্ধি করতে পারবে। এভাবে জবাবদিহির একটা পরিবেশও তৈরি হবে। আমি বলছি না এটাই কার্যকরী, তবে আমরা এ পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখতে পারি। না হলে পরবর্তী পদ্ধতি নিয়ে অগ্রসর হব।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর উদ্দেশ্য কীমানুষকে দরিদ্র থেকে বের করে আনা নাকি কোনো না কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা?

ইউরোপে ১৮৯০ শতকের শুরুর দিকে সোশ্যাল সেফটি নেট ধারণার সূচনা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দারিদ্র্য হ্রাস করা। একজন মানুষের জীবনচক্রে সে যেসব ঝুঁকির মুখোমুখি হয় তা প্রশমিত করার কথা বলছে তারা। বাংলাদেশে আমরাও এদিকে মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা দারিদ্র্য দূরীকরণ পদ্ধতি থেকে জীবনমান উন্নয়নের কথা বলছি। সামাজিক সুরক্ষায় প্রধান তিনটি উপাদান রয়েছে। এক. সামাজিক সহায়তা। দুই. সামাজিক বীমা। তিন. শ্রমবাজারভিত্তিক কর্মসূচি। দরিদ্র, ছিন্নমূল ও শারীরিকভাবে অসমর্থদের আমরা সামাজিক সহায়তা প্রদান করছি। ক্রমে এর সংখ্যা কমে আসবে। সামাজিক বীমাসংক্রান্ত কর্মসূচিগুলো বেড়ে যাবে। পেনশন ফান্ড, বেকারত্ব বীমা, মাতৃত্বকালীন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা—এ ধরনের বীমা সুবিধার মাধ্যমে সচ্ছল পরিবারগুলো বিনিয়োগ করবে। চাকরি চলে গেলে বীমার আওতায় ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নারীরা গর্ভধারণ করলে সে বাজার থেকে ছিটকে যাবে না। বাংলাদেশে শুধু পেনশন বীমা শুরু হচ্ছে, কিন্তু এটা ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা পণ্যের সঙ্গেও পরিচয় করানো জরুরি। এর মাধ্যমে বড় ধরনের তহবিলও সংগ্রহ করা যায়, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ব্যয় করা সম্ভব। এ জায়গায় আমাদের অনেক কাজ করা বাকি। বেকারত্ব বীমা ও মাতৃত্বকালীন বীমা শ্রমবাজারের বিষয়। ইউএন ওইম্যানের পক্ষ থেকে কেয়ার সার্ভিসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। যা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, বয়স্কদের যত্ন ইত্যাদি বিষয় দেখবে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম শুধু দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, সমাজের সবার জন্য, যা মানুষের আপৎকালীন পরিস্থিতিকে সামলাতে সহযোগিতা করবে।

আমাদের দেশে সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টি এখনো দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে….

আমি মনে করি, এটা খুবই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। অনেকেই বলে যে, যেহেতু দেশে দারিদ্র্যের হার কমে গেছে তাই আর সামাজিক সুরক্ষার দরকার নেই, সেটিও ঠিক নয়। আমাদের ভঙ্গুরতা-ঝুঁকি দুটোই বাড়ছে। আমরা যদি ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, তারা যত বেশি ধনী হয়েছে ততই তাদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপ্তি বেড়েছে। বাংলাদেশ যত বেশি ধনী, উন্নত ও শিক্ষিত হবে তত বেশি সরকারের কাছে জনগণের চাহিদা বাড়তে থাকবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি বাড়বে। সরকার কীভাবে তার নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে তা দেখতে হবে। আমাদের অনেক অনানুষ্ঠানিক সুরক্ষা কার্যক্রম রয়েছে, যা টেকসই নয়। এ জায়গাগুলোয় কাজ করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু এখনো ফোকাস ঠিক হয়নি। এখন শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে কথা বললে চলবে না, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সেবা নিয়েও আলোচনা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে এ ধরনের দারিদ্র্য থাকবে না, কিন্তু ঝুঁকি থাকবে। নতুন ধরনের দারিদ্র্য তৈরি হবে। তখন সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয় হবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা অন্যতম বড় খাত হবে। এ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে।

https://bonikbarta.net/home/news_description/300852/শুধু-দরিদ্র-জনগোষ্ঠীকে-ঘিরে-সামাজিক-নিরাপত্তা-কর্মসূচির-চিন্তা-ভ্রান্ত-দৃষ্টিভঙ্গি

 

Dr. Bazlul Haque Khondker

Dr. Bazlul Haque Khondker

Dr. Bazlul Haque Khondker holds a PhD from the University of Warwick and is currently teaching at Dhaka University as a Professor of Economics. His areas of expertise include: (i) analysis of poverty and income distribution impacts of trade and tax policy reforms using static as well as dynamic Computable ...